
প্রকাশিত: Sun, Jan 8, 2023 3:01 PM আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 5:22 AM
কুড়িগ্রামের জয়নাল এবং ধনীলোকের ফেস্টিভ্যাল
কাকন রেজা
কুড়িগ্রামের জয়নালের কাছে ম্লান হয়ে গেছে অনেক বাগাড়ম্বর। দিনমজুর জয়নাল। যিনি দিন আনেন, দিন খান। সেই জয়নালই গড়ে তুলেছেন সাড়ে তিন হাজার বইয়ের লাইব্রেরি। প্রমাণ করেছেন, ধনীলোকের ফেস্টিভ্যাল নয়, বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় প্রয়োজন ইচ্ছে, স্পৃহা। আকাক্সক্ষা না থাকলে চর্চা হয় না। ঢাকা লিট ফেস্ট চলছে। অনেকেই বলেন, গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত কেন নয় এমন একটা আয়োজন। জানি, এর জবাব ধনীলোকজন নানা ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সেই ব্যাখ্যার সাথে তাদের প্রশ্ন করুন তো, জয়নানের জায়গা কি হয়েছে কথিত লিট ফেস্টে। আরেক দিনমজুর কবি যিনি লিখেছেন, অসংখ্য কবিতা। যার বই রয়েছে কয়েকটি। যাকে সবাই গরিবের কবি বলে। সেই গরিবের কবি গুলজার কি স্থান পাবে ধনীদের লিট ফেস্টে। সারোয়ার মনসুর। সামাজিকমাধ্যমের কল্যাণে মোটামুটি বিখ্যাত। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নিজে গান লেখেন, সুর করেন এবং নিজে গিটার বাজিয়ে সেই গান গান। কবিতাও লেখেন। জানি না তিনি লিট ফেস্টে জায়গা পেয়েছেন বা পাবেন কিনা। এই তিনজন শুধু সামাজিকমাধ্যমেই খ্যাত নন, গণমাধ্যমেও তাদের কীর্তি জায়গা পেয়েছে।
এই তিনজন নয়, আরও উদাহরণ রয়েছে। স্বয়ং নজরুলের কথা বলি। তিনিও প্রথমে উপেক্ষিত হয়েছেন তৎকালীন বাবুদের আয়েশী বৈঠকখানার সাহিত্যের আসর হতে। ধনীলোক দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা খুব এগোয়নি। গণমানুষের সাহিত্য হয়ে ওঠেনি। তাদের সফলতার খুব বেশি নজির অন্তত এই উপমহাদেশে নেই। ধনীলোকদের সাহিত্য-সংস্কৃতি একসময় ছিলো বাঈজীবাড়ির আঙিনায়। তারা যেতেন মৌজ করতে। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ছিলো ধনীদের বৈঠকি আলাপ। সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অথচ আজকে চলছে তার উল্টো যাত্রা।
আমাদের মানসিক দৈন্যতার কথা বলি। কলকাতার কবি জয় গোস্বামী বললেন, বাংলাদেশের সাহিত্য কলকাতার চেয়ে এগিয়ে। তাতেই অনেকে গদগদ হয়ে গেলেন। জয় গোস্বামীর মতন কবির কাছ থেকে বাংলাদেশের সাহিত্যের স্বীকৃতি নিতে হবে কেন! অনেকে বলেন, বিশ্বসাহিত্যের দৃশ্যমান কোনো স্থানে বাংলা সাহিত্যের জায়গা হবে না। কেন হবে না, যারা বলছেন, তারা বাংলা সাহিত্যের জন্য কী করেছেন? তাদের কোন কীর্তি রয়েছে বাংলা সাহিত্যে? এ প্রশ্নের খুঁজতে গিয়ে দেখবেন, কিছু ভিনদেশি সাহিত্যের অনুবাদ ছাড়া তাদের কারো তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। এমননি নিজের লেখা অনুবাদ করে দেশের বাইরে প্রকাশের প্রয়াসটাও তাদের নেই। উল্টো রয়েছে বাণিজ্যিক চিন্তা, অনুবাদের মাধ্যমে কিছু কামিয়ে নেওয়ার ধান্ধা। যারা ভালো অনুবাদ করতে পারেন, তারা বাংলা সাহিত্যের কোনো উল্লেখযোগ্য লেখকের লেখা অনুবাদ করে বিশ্বসভায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন? দু’চারটা ইচ্ছাকৃত ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া আর তেমন কোনো নজির কি আছে? নেই।
সোমালিয়া।
গৃহযুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষ পীড়িত একটি দেশ। সেখানকার লেখক নুরুদ্দীন ফারাহকে নিয়ে চলছে ঢাকার লিট ফেস্টে চাঞ্চল্য। অথচ কেউ আয়নায় নিজের চেহারা দেখছেন না। এই লেখক বলছেন, ‘পেটে ক্ষুধা থাকলে সাহিত্য নিয়ে ভাববে কীভাবে মানুষ?’ আমাদের গণমানুষের অবস্থাও তথৈবচ। এমন অবস্থায় ধনীলোকের ফেস্টিভ্যাল মানুষের অসহায়ত্বকে উপহাস করার শামিল। উপরে যাদের কথা বললাম, যারা ধনে ধনীলোক নন, কিন্তু চিন্তায় বড়লোক, তাদের অবজ্ঞা করার শামিল। গণমানুষ থেকে আলাদা করে সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বৈঠকী জলসায়, বুদ্ধিবৃত্তিকে আয়েশী বৈঠকখানায় বন্দি করার শামিল। কবে যে আমাদের ফেস্টিভ্যাল প্রিয় ‘এলিট’দের এসবে বোধোদয় হবে? ফুটনোট : ভাইলোক, ‘ঢাকা এখন বিশ্ব সাহিত্যের রাজধানী’ এবং ‘অমিতাভ ঘোষ বাংলাদেশের লেখকদের লেখা পড়েননি’ এ বয়ান দুটির কন্ট্রাস্ট কি চোখে পড়ছে? না পড়লে, আপনার সাহিত্য নিয়ে কথা বলা কি আদৌ প্রয়োজন? লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
